ইসলামিক শিক্ষার ভিত্তি গড়ে ওঠে শৈশবেই, আর সেই ভিত্তিকে সুদৃঢ় করার প্রথম ধাপ হলো মক্তব শিক্ষা। এটি কেবল ধর্মীয় আচার শিক্ষার স্থান নয়; বরং একজন শিশুর নৈতিকতা, আত্মশুদ্ধি, ব্যক্তিত্ব গঠন এবং ইসলামী পরিচয়ের প্রাথমিক পাঠশালা।
বর্তমান সময়ে, যখন নৈতিক অবক্ষয়, ধর্মীয় দুর্বলতা ও পাশ্চাত্য সাংস্কৃতিক আগ্রাসন সমাজকে গ্রাস করছে, তখন মক্তব শিক্ষার প্রসার অত্যন্ত জরুরি।
মক্তব কী এবং কেন জরুরি?
“মক্তব” শব্দটি এসেছে আরবি ‘মক্তাব’ থেকে, যার অর্থ পড়াশোনার স্থান। এটি সাধারণত মসজিদভিত্তিক পাঠশালা, যেখানে শিশুদের শেখানো হয়—
- কুরআনুল কারিম তিলাওয়াত ও মুখস্থ
- হাদীসের মৌলিক শিক্ষা
- নামাজ, রোজা ও অন্যান্য ইবাদত
- আদব-আখলাক ও চরিত্র গঠন
- প্রয়োজনীয় মাসআলা-মাসায়েল
একটি শিশু যখন শৈশবে কুরআনের আলোয় আলোকিত হয়, তখন তার অন্তরে খোদাভীতি ও দায়িত্ববোধের বীজ বপিত হয়। সেই শিশু বড় হয়ে হয় সৎ, ন্যায়পরায়ণ, আত্মমর্যাদাসম্পন্ন এবং দায়িত্বশীল নাগরিক।
মক্তব শিক্ষা বনাম প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা
বর্তমান প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা মূলত দুনিয়াবি সফলতা নির্ভর। এতে শিশুরা তথ্যভিত্তিক জ্ঞান অর্জন করে ঠিকই, কিন্তু আত্মিক ও নৈতিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত থাকে। ফলে অনেক শিক্ষিত মানুষও দুর্নীতিপরায়ণ, অন্যায়ের পৃষ্ঠপোষক অথবা ধর্মীয় মূল্যবোধহীন হয়ে পড়ে।
অন্যদিকে, মক্তব শিক্ষা শিশুদের শেখায়:
“إِنَّ اللّهَ كَانَ عَلَيْكُمْ رَقِيبًا”
“নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের উপর সদা পর্যবেক্ষক।”
(সূরা নিসা, আয়াত ১)
এই আয়াত তাদের মনে বদ্ধমূল করে যে, প্রতিটি কাজের জবাবদিহিতা আছে।
সমাজ গঠনে মক্তব শিক্ষার ভূমিকা
একটি সমাজ তখনই সুস্থ ও টেকসই হতে পারে, যখন তার নাগরিকরা নৈতিক ও আত্মসংযমী। এই নাগরিক গঠনের কারখানা হলো মক্তব। এর সুফলগুলো হলো:
- পরিবারে শান্তি: শিশুরা ঘরে পিতামাতার প্রতি সম্মান প্রদর্শনে অভ্যস্ত হয়।
- নেতৃত্বে যোগ্যতা: ধর্মভিত্তিক নৈতিকতা একজন মানুষকে দৃঢ় নেতৃত্বে সক্ষম করে।
- অপরাধ প্রবণতা হ্রাস: মক্তব চালু এলাকায় কিশোর অপরাধের হার তুলনামূলক কম।
বর্তমান বাস্তবতায় চ্যালেঞ্জ ও করণীয়
বর্তমানে অনেক গ্রাম ও শহরে মক্তব বিলুপ্তপ্রায়। অনেক শিশু কুরআন পড়ার সুযোগ পাচ্ছে না। এই বাস্তবতায় মক্তব শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করা জরুরি।
করণীয়সমূহ:
- প্রতিটি মসজিদে মক্তব চালু করা।
- দীনদার ও দক্ষ শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া।
- স্থানীয়ভাবে একটি মক্তব ফান্ড গঠন করা।
- যাকাত, ফিতরা ও সাধারণ সাদাক্বাহর অর্থ দিয়ে মক্তব খরচ চালানো সম্ভব।
- মক্তব শিক্ষাকে আধুনিক শিক্ষার সাথে সংযুক্ত করা, যেন অভিভাবকেরা উৎসাহ পান।
শেষকথা
মক্তব শিক্ষা কেবল একজন শিশুর নয়, বরং একটি জাতির ভবিষ্যৎ নির্মাণের প্রথম ধাপ।
এটি এমন এক আলো, যা মানুষ, পরিবার, সমাজ এবং জাতিকে আলোকিত করে।
আসুন, আমরা সবাই মিলে মক্তব শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগী হই—
এটি আমাদের ইমানি দায়িত্ব, উম্মাহর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথ।